০৮:৩৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০২৫, ২৭ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আর্ট এক্সিবিশন- কাগজের গল্প: শৈশব থেকে শিল্পের বন্ধন

  • দৈনিক সময়ের কথা
  • প্রকাশিত: ১০:০২:২৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ৫৫ বার দেখা হয়েছে

শিল্পী দুলাল চন্দ্র দাস (আবীর) এর

“কাগজের গল্প: শৈশব থেকে শিল্পের বন্ধন” শিরোনামে আর্ট এক্সিবিশন হয়ে গেল ঢাকা, ধানমন্ডির সাইফুদ্দিন শিল্পালয় হাউজে ১৪ থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে।

এই এক্সিবিশনে ঢাকাস্থ বিভিন্ন স্বনামধন্য চিত্রশিল্পীদের উপস্থিতি ঘটে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য
১.শিল্পী আবুল বারা্ক আলভি।
২.চন্দ্র শেখর সাহা,
(গবেষক ও ডিজাইনার)
৩.সৌমিক দাস
(প্রধান নির্বাহী, রঙ বাংলাদেশ)
৪.শিল্পী রফিকুন নবী।
৫.অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুস স্যার।
(চেয়ারম্যান আর্ট বাংলা ফাউন্ডেশন)
৬.শিল্পী রশিদ আমিন।
(জগনাথ বিশ্ববিদ্যালয়)
৭.শিল্পী রাসেদ সুখন।
(জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়)
৮.শিল্পী নগরবাসী বর্মন পার্থ
(জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়)
৯.শিল্পী সুসান্ত অধিকারী
(ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চারুকলা বিভাগ)
১০.শিল্পী শামিম রেজা
(জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়)।
১১. চলচ্চিত্রকার গৌতম কৈরী।
এছাড়াও প্রদর্শনীতে বাংলাদেশ টেলিভিশনের বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মজীবীসহ শিল্প-সাহিত্য-চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সমাগম ঘটে।

শিল্পী দুলাল চন্দ্র দাস (আবীর) এর এই এক্সিবিশন এবং তার শিল্পচর্চার অভিনব কায়দায় বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে।

দুলাল চন্দ্র দাস (আবির) বলেন-
ছোটবেলায় আমাদের পাশের এলাকার একটি পেপার মিলে মোটা ধরনের কাগজ তৈরি হতো, যা শুকিয়ে মিষ্টির প্যাকেট তৈরিতে ব্যবহার করা হতো। সেই খসখসে কাগজের টুকরোতে যখন জল আর রঙের ফোঁটা পড়ত, তখন সেখানে ফুটে উঠত এক জাদুময় দৃশ্য। ছোটবেলার সেই স্মৃতি আমাকে গভীরভাবে মুগ্ধ করত। তখন থেকেই কাগজ আমার কাছে কেবল একটি ব্যবহারিক উপাদান নয়, বরং সৃষ্টিশীলতার এক অসীম ক্ষেত্র হিসেবে ধরা দিয়েছে। চারুকলায় ভর্তি হওয়ার পর আমি পরিচিত হই বিভিন্ন ধরনের পেপারের সাথে আর্ট পেপার, কার্টিস পেপার, এম্বোস পেপার। কিন্তু সত্যিকারের অনুপ্রেরণা পাই হাতে তৈরি কাগজের প্রক্রিয়া সাথে পরিচিত হওয়ার পর। যখন আমি প্রথমবার নিজ হাতে কাগজ তৈরি করি, তখন মনে হয়েছিল শৈশবের সেই রঙিন দিনগুলো যেন আবার ফিরে এসেছে। প্রতিটি ছোয়াঁয় যেন কাগজ নতুন প্রাণ পেত। পড়াশোনা শেষে এক আমেরিকান গবেষণা প্রতিষ্ঠানে হাতে তৈরি পেপার প্রজেক্ট ডিজাইনার হিসেবে কাজ শুরু করি। সেখানে জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হয়। দীর্ঘ ১৪ বছরের অভিজ্ঞতায় শিখলাম স্থানীয় উপাদান থেকে ফাইবার সংগ্রহ করে নিজ হাতে কাগজ তৈরি করা। শণ, গমের খড়, আনারস পাতা, নারকেল ফাইবার, পুনর্ব্যবহৃত কাগজ এবং তুলার বর্জ্য থেকে কাগজ তৈরির এই প্রক্রিয়ায় এক অদ্ভুত আনন্দ খুঁজে পাই। কাগজ তৈরির এই প্রক্রিয়া আমার কাছে শুধুমাত্র একটি পেশা নয়। এটি শিল্পের প্রতি আমার দৃষ্টিভঙ্গিকে নতুন এক মাত্রা দিয়েছে। আমার কাছে শিল্প কেবল ক্যানভাসে ছবি আঁকা নয়। বরং নিজ হাতে কাগজ তৈরির যে প্রক্রিয়া, সেটিই আমার শিল্পের অভিযাত্রার মূল। কাগজ তৈরির প্রতিটি ধাপে ফাইবার ভাঙা থেকে রঙ মিশিয়ে ক্যানভাস তৈরি করা পযর্ন্ত আমি সৃজনশীলতার নতুন নতুন দিগন্ত আবিষ্কার করি। কাগজের সৌন্দর্য তার টেক্সচারে। সেই টেক্সচারের ভাষা, মাটির গন্ধ আর রঙের
ছোয়াঁয় বিমূর্ত আকারে আমি প্রকৃতির নিবিড় প্রতিচ্ছবি আঁকি।
কলা গাছের বাকল
কলা গাছের বাকল থেকে এক ধরনের কাগজ তৈরী করা হয়। কলা চাষের পর কান্ড সাধারণত ফেলে দেওয়া হয়। তবে এই অংশগুলিতে ফাইবারের উপলব্ধ উৎস থাকে কলা গাছের বাকল, যা কোন কাজে আসে না। কলা সংগ্রহের পর কৃষকরা গাছটি কেটে ফেলে। এটি পরিত্যাক্ত হিসেবে ধরা হয়। এই পরিত্যাক্ত বাকল থেকে কাগজ উৎপাদন করা যায়। আমাদের এই কাগজ তৈরিতে পরিবেশ দূষণরোধে
ভুমিকা পালন করবে।

গার্মেন্টস বর্জ্য
পরিবেশের ক্ষতি করতে পারে, বিশেষ করে গার্মেন্টস বর্জ্যর মাধ্যমে। পচনশীল পোশাক বা গার্মেন্টস বর্জ্য থেকে রাসায়নিক বাতাসে এবং মাটিতে প্রবেশ করতে পারে, যা ভূগর্ভস্থ জল এবং পৃষ্ঠের জলকে প্রভাবিত করে। আমাদের দেশের চলমান পোশাক কারখানাগুলি যথাযথ শ্রম ব্যবস্থাপনার অভাবে বিপুল পরিমাণে পোশাক বর্জ্য উৎপাদন করছে, যা পরিবেশগত ঝুঁকির কারণ। কারখানাগুলি এই বর্জ্য সঠিকভাবে ব্যবহারের পরিবর্তে স্থানীয় খুচরা বিক্রেতাদের কাছে কম দামে বিক্রি করে। কিছু বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলা হয় এবং ক্ষতিকারক ধোয়াঁ উৎপন্ন করে, যা
পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ।

গার্মেন্টস বর্জ্য পুনর্ব্যবহৃত ব্যবহারের ফলে কাগজ তৈরী আমাদের পরিবেশ
গত ঝুঁকির পরিবেশ অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

আমার এই প্রদশর্নীটা তিন পর্ব হিসাবে ক্রমান্বয়ে আসবে। এটা আমার কাগজের প্রথম পর্ব একক চিত্র প্রদশর্নী। এর পরিবর্তী আমাদের দেশীয় উপদান দিযে ২য় পর্ব
শিল্প কর্ম প্রদশর্নী হবে এবং ৩য় পর্বে থাকবে আমাদের দেশীয় সব উপদান।।

টেগ :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয়

আশুলিয়ায় ফুটপাতে চলছে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি, নেতৃত্বে স্থানীয় প্রভাবশালী আক্তার!

আর্ট এক্সিবিশন- কাগজের গল্প: শৈশব থেকে শিল্পের বন্ধন

প্রকাশিত: ১০:০২:২৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

শিল্পী দুলাল চন্দ্র দাস (আবীর) এর

“কাগজের গল্প: শৈশব থেকে শিল্পের বন্ধন” শিরোনামে আর্ট এক্সিবিশন হয়ে গেল ঢাকা, ধানমন্ডির সাইফুদ্দিন শিল্পালয় হাউজে ১৪ থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে।

এই এক্সিবিশনে ঢাকাস্থ বিভিন্ন স্বনামধন্য চিত্রশিল্পীদের উপস্থিতি ঘটে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য
১.শিল্পী আবুল বারা্ক আলভি।
২.চন্দ্র শেখর সাহা,
(গবেষক ও ডিজাইনার)
৩.সৌমিক দাস
(প্রধান নির্বাহী, রঙ বাংলাদেশ)
৪.শিল্পী রফিকুন নবী।
৫.অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুস স্যার।
(চেয়ারম্যান আর্ট বাংলা ফাউন্ডেশন)
৬.শিল্পী রশিদ আমিন।
(জগনাথ বিশ্ববিদ্যালয়)
৭.শিল্পী রাসেদ সুখন।
(জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়)
৮.শিল্পী নগরবাসী বর্মন পার্থ
(জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়)
৯.শিল্পী সুসান্ত অধিকারী
(ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চারুকলা বিভাগ)
১০.শিল্পী শামিম রেজা
(জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়)।
১১. চলচ্চিত্রকার গৌতম কৈরী।
এছাড়াও প্রদর্শনীতে বাংলাদেশ টেলিভিশনের বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মজীবীসহ শিল্প-সাহিত্য-চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সমাগম ঘটে।

শিল্পী দুলাল চন্দ্র দাস (আবীর) এর এই এক্সিবিশন এবং তার শিল্পচর্চার অভিনব কায়দায় বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে।

দুলাল চন্দ্র দাস (আবির) বলেন-
ছোটবেলায় আমাদের পাশের এলাকার একটি পেপার মিলে মোটা ধরনের কাগজ তৈরি হতো, যা শুকিয়ে মিষ্টির প্যাকেট তৈরিতে ব্যবহার করা হতো। সেই খসখসে কাগজের টুকরোতে যখন জল আর রঙের ফোঁটা পড়ত, তখন সেখানে ফুটে উঠত এক জাদুময় দৃশ্য। ছোটবেলার সেই স্মৃতি আমাকে গভীরভাবে মুগ্ধ করত। তখন থেকেই কাগজ আমার কাছে কেবল একটি ব্যবহারিক উপাদান নয়, বরং সৃষ্টিশীলতার এক অসীম ক্ষেত্র হিসেবে ধরা দিয়েছে। চারুকলায় ভর্তি হওয়ার পর আমি পরিচিত হই বিভিন্ন ধরনের পেপারের সাথে আর্ট পেপার, কার্টিস পেপার, এম্বোস পেপার। কিন্তু সত্যিকারের অনুপ্রেরণা পাই হাতে তৈরি কাগজের প্রক্রিয়া সাথে পরিচিত হওয়ার পর। যখন আমি প্রথমবার নিজ হাতে কাগজ তৈরি করি, তখন মনে হয়েছিল শৈশবের সেই রঙিন দিনগুলো যেন আবার ফিরে এসেছে। প্রতিটি ছোয়াঁয় যেন কাগজ নতুন প্রাণ পেত। পড়াশোনা শেষে এক আমেরিকান গবেষণা প্রতিষ্ঠানে হাতে তৈরি পেপার প্রজেক্ট ডিজাইনার হিসেবে কাজ শুরু করি। সেখানে জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হয়। দীর্ঘ ১৪ বছরের অভিজ্ঞতায় শিখলাম স্থানীয় উপাদান থেকে ফাইবার সংগ্রহ করে নিজ হাতে কাগজ তৈরি করা। শণ, গমের খড়, আনারস পাতা, নারকেল ফাইবার, পুনর্ব্যবহৃত কাগজ এবং তুলার বর্জ্য থেকে কাগজ তৈরির এই প্রক্রিয়ায় এক অদ্ভুত আনন্দ খুঁজে পাই। কাগজ তৈরির এই প্রক্রিয়া আমার কাছে শুধুমাত্র একটি পেশা নয়। এটি শিল্পের প্রতি আমার দৃষ্টিভঙ্গিকে নতুন এক মাত্রা দিয়েছে। আমার কাছে শিল্প কেবল ক্যানভাসে ছবি আঁকা নয়। বরং নিজ হাতে কাগজ তৈরির যে প্রক্রিয়া, সেটিই আমার শিল্পের অভিযাত্রার মূল। কাগজ তৈরির প্রতিটি ধাপে ফাইবার ভাঙা থেকে রঙ মিশিয়ে ক্যানভাস তৈরি করা পযর্ন্ত আমি সৃজনশীলতার নতুন নতুন দিগন্ত আবিষ্কার করি। কাগজের সৌন্দর্য তার টেক্সচারে। সেই টেক্সচারের ভাষা, মাটির গন্ধ আর রঙের
ছোয়াঁয় বিমূর্ত আকারে আমি প্রকৃতির নিবিড় প্রতিচ্ছবি আঁকি।
কলা গাছের বাকল
কলা গাছের বাকল থেকে এক ধরনের কাগজ তৈরী করা হয়। কলা চাষের পর কান্ড সাধারণত ফেলে দেওয়া হয়। তবে এই অংশগুলিতে ফাইবারের উপলব্ধ উৎস থাকে কলা গাছের বাকল, যা কোন কাজে আসে না। কলা সংগ্রহের পর কৃষকরা গাছটি কেটে ফেলে। এটি পরিত্যাক্ত হিসেবে ধরা হয়। এই পরিত্যাক্ত বাকল থেকে কাগজ উৎপাদন করা যায়। আমাদের এই কাগজ তৈরিতে পরিবেশ দূষণরোধে
ভুমিকা পালন করবে।

গার্মেন্টস বর্জ্য
পরিবেশের ক্ষতি করতে পারে, বিশেষ করে গার্মেন্টস বর্জ্যর মাধ্যমে। পচনশীল পোশাক বা গার্মেন্টস বর্জ্য থেকে রাসায়নিক বাতাসে এবং মাটিতে প্রবেশ করতে পারে, যা ভূগর্ভস্থ জল এবং পৃষ্ঠের জলকে প্রভাবিত করে। আমাদের দেশের চলমান পোশাক কারখানাগুলি যথাযথ শ্রম ব্যবস্থাপনার অভাবে বিপুল পরিমাণে পোশাক বর্জ্য উৎপাদন করছে, যা পরিবেশগত ঝুঁকির কারণ। কারখানাগুলি এই বর্জ্য সঠিকভাবে ব্যবহারের পরিবর্তে স্থানীয় খুচরা বিক্রেতাদের কাছে কম দামে বিক্রি করে। কিছু বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলা হয় এবং ক্ষতিকারক ধোয়াঁ উৎপন্ন করে, যা
পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ।

গার্মেন্টস বর্জ্য পুনর্ব্যবহৃত ব্যবহারের ফলে কাগজ তৈরী আমাদের পরিবেশ
গত ঝুঁকির পরিবেশ অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

আমার এই প্রদশর্নীটা তিন পর্ব হিসাবে ক্রমান্বয়ে আসবে। এটা আমার কাগজের প্রথম পর্ব একক চিত্র প্রদশর্নী। এর পরিবর্তী আমাদের দেশীয় উপদান দিযে ২য় পর্ব
শিল্প কর্ম প্রদশর্নী হবে এবং ৩য় পর্বে থাকবে আমাদের দেশীয় সব উপদান।।