
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে কয়েকটি গ্রামের তিন ফসলি জমি থেকে কাটা হচ্ছে মাটি। সেই মাটি যাচ্ছে ইটের ভাটায়। ৩০ থেকে ৩৫ ফুট গভীর করে মাটি কাটার ফলে আশপাশের কৃষিজমিও ভেঙে পড়ছে। জমির মাটি অবৈধভাবে জোরপূর্বক কেটে নিয়ে ইটভাটায় বিক্রি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে একটি চক্রের বিরুদ্ধে।
উপজেলার জামপুর ইউনিয়নের পেরাব গ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে মো. রিপন মিয়া এ চক্রের মুল হোতা বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
বর্তমানে কান্দাপাড়া এলাকায় ফসলী জমির মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে ফলন উৎপাদন করা যাচ্ছে না ফসলী জমিতে। পাশাপাশি জমির শ্রেণী পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। এ ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন ফসলি জমির মালিক ও কৃষকরা। স্থানীয় প্রশাসন তৎপর হলে প্রভাবশালী মাটি ব্যবসায়ীদের কার্যক্রম বন্ধ করতে পারবে। তবে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, অবৈধ মাটি কাটায় স্থানীয় পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারী জড়িত রয়েছে। মাটি কাটা বন্ধে প্রতিকার চেয়ে উপজেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেও কোন ফল পাওয়া যায়নি।
এলাকাবাসী জানান, উপজেলার জামপুর ইউনিয়নের পেরাব, আমবাগ,কাহেনা, শিংলাবো, কান্দাপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় তিন ফসলি কৃষিজমির মাটি পেরাব গ্রামের রিপন মিয়ার নেতৃত্বে একটি চক্র জোরপূর্বক কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এ চক্রের লোকজন নামে মাত্র দাম দিয়ে কিছু সংখ্যক জমির মালিকের জমি কিনে বাকি জমির মাটি জোরপূর্বক কেটে নিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিনই এ ফসলি জমির মাটি ভেকু দিয়ে প্রায় ৩০-৩৫ ফুট গভীর গর্ত করে কেটে নিয়ে গেলেও ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। একটি জমির মাটি গভীর করে ভেকু দিয়ে কেটে নেওয়ার পর পার্শ্ববর্তী জমি এমনিতেই ভেঙে গিয়ে গর্তে পরিণত হচ্ছে। অপরিকল্পিতভাবে মাটি কাটার ফলে ওই জমিগুলোতে মাছ চাষও করতে পারছে না। দিন দিন ফসলি জমিগুলো পরিণত হচ্ছে ডোবা ও অপরিকল্পিত পুকুর জলাশয়ে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, সাবেক বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর আত্মীয় পরিচয়ে আওয়ামীলীগের শাসন আমলে লুটপাটে জড়িত ছিলেন মো রিপন মিয়া। তার নেতৃত্বে ১০-১২ জনের একটি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে রাতের আধারে এশিয়ান হাইওয়ে নির্মাণাধীন সড়কের বালু লুট করারও অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, এক সময় জমিগুলো তিন ফসল ফলানো হতো। ফসল ফলানো তো দূরের কথা মাছ চাষ করাও সম্ভব হয় না। গভীরভাবে মাটি কেটে নেওয়ার কারনে জমির শ্রেণী পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। কৃষিজমির মাটি এতটাই গভীর করে কেটে নিয়ে যায় দেখলে কৃষি জমিকে যে কেউ পুকুর বলতে হবে। প্রতিটি জমি ভেকু দিয়ে ৩০-৩৫ ফুট গভীর করে মাটি কটে নিয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিনে মঙ্গলবার দুপুরে কান্দাপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সিটিভি নামের একটি ইটভাটার পূর্ব পাশে ৮-১০টি কৃষি জমির মাটি ভেকুর মাধ্যমে গর্ত করে ইটভাটায় বিক্রি করছেন। ইটভাটার পাশেই মাটির হিসাব রাখার জন্য তিন চার জন লোক বসা ছিল। ফসলী জমির মাটি গভীর ভাবে কেটে নেওয়ার ফলে পাশ্ববর্তী জমি ভেঙ্গে যাচ্ছে। ফলে কৃষক বাধ্য হয়ে ওই জমির মাটি চক্রের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। সাংবাদিকদের ঘটনাস্থলে যাওয়ার খবরে ভেকু ফেলে ড্রাম ট্রাক নিয়ে ছটকে পড়ে মাটি খেকোরা। এছাড়াও ওই এলাকার এইচআরবি ইপভাটাসহ রূপগঞ্জের কয়েকটি ইটভাটায় মাটি বিক্রি করেন বলে জানা যায়।
কান্দাপাড়া গ্রামের কৃষক আবুল হাশেম সোনারগাঁও নিউজকে জানান, কৃষকদের ফসলী জমির মাটি বিক্রিতে বাধ্য করা হচ্ছে। ইচ্ছে না থাকলেও ফসল ফলাতে না পারার কারনে বাধ্য হয়ে মাটি বিক্রি করতে হয়। মাটি বিক্রি না করলে জোরপূর্বক মাটি কেটে নেওয়া হয়। মাটি কাটা বন্ধে একাধিকবার মানববন্ধন ও স্মারকলিপি দিয়েও প্রশাসনের কাছ থেকে সহযোগিতা পাওয়া যায়নি।
অভিযুক্ত মো. রিপন মিয়া জানান, আমার নিজের প্রয়োজনে আমার জমির মাটি কেটে বিক্রি করেছি। এখানে কোন ফসলী জমি নাই। অনেকেই জমির মাটি কেটে বিক্রি করেন। জমির শ্রেণী পরিবর্তনের বিষয়ে তিনি কোন উত্তর না দিয়ে ফোন কেটে দেন।
সোনারগাঁওয়ের কাঁচপুর সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) শেগুফতা মেহনাজ সোনারগাঁও নিউজকে জানান, কৃষি জমির মাটি কাটার বিষয়টি অবগত না। তবে বিভিন্ন মিডিয়া কর্মীরা তথ্য দিচ্ছেন। তহসিলদার পাঠিয়ে মাটি কাটা বন্ধ করা হবে।
সোনারগাঁও থানার ওসি মোহাম্মদ আব্দুল বারী বলেন, কেউ আমাদের নাম ব্যবহার করে অপকর্ম করলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। মাটি কাটা বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারজানা রহমান জানান, ফসলী জমির মাটি কেটে জমির শ্রেণী পরির্তন কোনভাবেই গ্রহন যোগ্য না। কেউ মাটি কেটে জমির শ্রেণী পরিবর্তন করতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।