০৮:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০২৫, ২৭ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বেনজীরের আশীর্বাদে হাজার কোটি টাকার মালিক জসিম

  • দৈনিক সময়ের কথা
  • প্রকাশিত: ১২:৪৪:২০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৪
  • ১০৮ বার দেখা হয়েছে

চট্টগ্রামের চন্দনাইশের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন আহমেদের হাজার কোটি টাকার সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে। অভিযোগ আছে, একসময় খাবারের দোকানে কাজ করা এই ব্যক্তি কীভাবে হাজার কোটি টাকার মালিক হলেন, তা নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। গতকাল জসিমের জামিন আবেদন করলে তা নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ঢাকার মহানগর হাকিম আদালত।

জানা গেছে, জসিম দুই সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও শহিদুল হকের ব্যবসায়িক অংশীদার এবং আশীর্বাদপুষ্ট। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানসহ বিগত সরকারের ক্ষমতাধরদের সঙ্গে ছিল তার ঘনিষ্ঠতা। এ সুযোগে তিনি স্বর্ণ চোরাচালান এবং ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। বিশেষ করে শত কোটি টাকার ঋণখেলাপি, অবৈধ সম্পদ অর্জন, স্বর্ণ চোরাচালান ও ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে জসিমের বিরুদ্ধে। নামে-বেনামে গড়েছেন হাজার কোটি টাকার সম্পাদক। জসিম কক্সবাজারের কলাতলী সাগরপাড়ে অবস্থিত হোটেল রামাদারের মালিক। হোটেলটির পার্টনার সাবেক আইজিপি বেনজীরও। সব মিলিয়ে এ হোটেলটিতে তার বিনিয়োগ ২৫০ কোটি টাকার বেশি। কলাতলী বিকাশ বিল্ডিং নামে পরিচিত একটি বহুতল আবাসিক হোটেলের ৭৯টি ফ্ল্যাট কিনেছেন জসিম। একই হোটেলে থাকা আরেক সাবেক আইজিপি শহিদুল হকের কাছ থেকে ১৩টি ফ্ল্যাটও কিনেছেন তিনি। এসব ফ্ল্যাটের বাজারমূল্য প্রায় শত কাটি টাকা। সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের লালদীঘির পশ্চিম পাড়ে প্রায় শত কাটি টাকা দিয়ে মহল শপিং কমপ্লেক্স কিনেছেন জসিম। চট্টগ্রামের চান্দগাঁও আবাসিক ই-ব্লকের ১৪ নম্বর প্লটে ৮০ শতক জমি রয়েছে তার, যার বাজারমূল্য ৭০ কোটি টাকা। ফিরিঙ্গি বাজারে ৩টি বহুতল আবাসিক ভবন, যার বাজারমূল্য ৮০ কোটি টাকা। চট্টগ্রামের খুলশীতে তিন কানি জমি, যার আনুমানিক বাজারমূল্য দেড় শ কোটি টাকা। বাকলিয়ায় ৫ কানি জমি, এর আনুমানিক বাজারমূল্য ১৭০ কোটি টাকা। এ ছাড়া চট্টগ্রামের পতেঙ্গা, হালিশহরের বিভিন্ন এলাকায় নামে-বেনামে শত কোটি টাকার জায়গা কিনেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

এ ছাড়া চন্দনাইশে নিজ এলাকায় বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করেছেন তিনি। গ্রামে নামে-বেনামে আরও অন্তত শত কোটি টাকার সম্পদ কিনেছেন। দুবাই ও সৌদি আরবে একাধিক হোটেলের মালিকানাসহ বিভিন্ন ব্যবসায় অন্তত ৫০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে তার। সব মিলিয়ে দেশ-বিদেশে জসিম উদ্দিনের হাজার কোটি টাকার বেশি সম্পদ গড়ে তুলেছেন।

এদিকে শেখ হাসিনার সরকার পতন আন্দোলনে অংশ নেওয়া অনেকে অন্ধ হয়েছেন সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের ক্যাশিয়ার এই জসিম উদ্দিন আহমেদের ছোড়া গুলিতে। বুধবার রাজধানীর নিকুঞ্জে হোটেল লো-মেরিডিয়ানের পাশে রাস্তা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে খিলক্ষেত থানা পুলিশ। ওইদিন তাকে আদালতে হাজির করা হয়। এর পর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাড্ডা থানার এসআই রাসেল পারভেজ তাকে আটক রাখার আবেদন করেন।

গতকাল ঢাকার মহানগর হাকিম বেলাল হোসেনের আদালত শুনানি শেষে জসিমকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পুলিশ বলছে, জসিম বাড্ডা থানায় দুর্জয় আহম্মেদ নামে এক ব্যক্তিকে হত্যাচেষ্টার মামলার আসামি।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ২০ জুলাই দুর্জয় আহম্মেদ (২৮) কোটা আন্দোলনের মিছিলে অংশগ্রহণ করে মধ্যবাড্ডা ইউলুপের নিচে পোস্ট অফিস গলির মাথায় রাস্তার ওপর অবস্থান নেয়। জসিম আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নির্দেশনায় অবৈধ অস্ত্র দিয়ে আন্দোলনকারীদের হত্যার উদ্দেশে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। এতে দুর্জয়ের দুই চোখ অন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া মাথায় পেছনে আঘাত লেগে গুরুতর আঘাত প্রাপ্ত হন। ওই সময়ে জসিম ও আওয়ামী লীগের অন্যরা দুর্জয়কে মৃত ভেবে রাস্তায় ফেলে চলে যান। পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে পাশের এএমজেড হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। পরে দুর্জয় উন্নত চিকিৎসার জন্য সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।

 

টেগ :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয়

আশুলিয়ায় ফুটপাতে চলছে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি, নেতৃত্বে স্থানীয় প্রভাবশালী আক্তার!

বেনজীরের আশীর্বাদে হাজার কোটি টাকার মালিক জসিম

প্রকাশিত: ১২:৪৪:২০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৪

চট্টগ্রামের চন্দনাইশের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন আহমেদের হাজার কোটি টাকার সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে। অভিযোগ আছে, একসময় খাবারের দোকানে কাজ করা এই ব্যক্তি কীভাবে হাজার কোটি টাকার মালিক হলেন, তা নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। গতকাল জসিমের জামিন আবেদন করলে তা নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ঢাকার মহানগর হাকিম আদালত।

জানা গেছে, জসিম দুই সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও শহিদুল হকের ব্যবসায়িক অংশীদার এবং আশীর্বাদপুষ্ট। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানসহ বিগত সরকারের ক্ষমতাধরদের সঙ্গে ছিল তার ঘনিষ্ঠতা। এ সুযোগে তিনি স্বর্ণ চোরাচালান এবং ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। বিশেষ করে শত কোটি টাকার ঋণখেলাপি, অবৈধ সম্পদ অর্জন, স্বর্ণ চোরাচালান ও ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে জসিমের বিরুদ্ধে। নামে-বেনামে গড়েছেন হাজার কোটি টাকার সম্পাদক। জসিম কক্সবাজারের কলাতলী সাগরপাড়ে অবস্থিত হোটেল রামাদারের মালিক। হোটেলটির পার্টনার সাবেক আইজিপি বেনজীরও। সব মিলিয়ে এ হোটেলটিতে তার বিনিয়োগ ২৫০ কোটি টাকার বেশি। কলাতলী বিকাশ বিল্ডিং নামে পরিচিত একটি বহুতল আবাসিক হোটেলের ৭৯টি ফ্ল্যাট কিনেছেন জসিম। একই হোটেলে থাকা আরেক সাবেক আইজিপি শহিদুল হকের কাছ থেকে ১৩টি ফ্ল্যাটও কিনেছেন তিনি। এসব ফ্ল্যাটের বাজারমূল্য প্রায় শত কাটি টাকা। সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের লালদীঘির পশ্চিম পাড়ে প্রায় শত কাটি টাকা দিয়ে মহল শপিং কমপ্লেক্স কিনেছেন জসিম। চট্টগ্রামের চান্দগাঁও আবাসিক ই-ব্লকের ১৪ নম্বর প্লটে ৮০ শতক জমি রয়েছে তার, যার বাজারমূল্য ৭০ কোটি টাকা। ফিরিঙ্গি বাজারে ৩টি বহুতল আবাসিক ভবন, যার বাজারমূল্য ৮০ কোটি টাকা। চট্টগ্রামের খুলশীতে তিন কানি জমি, যার আনুমানিক বাজারমূল্য দেড় শ কোটি টাকা। বাকলিয়ায় ৫ কানি জমি, এর আনুমানিক বাজারমূল্য ১৭০ কোটি টাকা। এ ছাড়া চট্টগ্রামের পতেঙ্গা, হালিশহরের বিভিন্ন এলাকায় নামে-বেনামে শত কোটি টাকার জায়গা কিনেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

এ ছাড়া চন্দনাইশে নিজ এলাকায় বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করেছেন তিনি। গ্রামে নামে-বেনামে আরও অন্তত শত কোটি টাকার সম্পদ কিনেছেন। দুবাই ও সৌদি আরবে একাধিক হোটেলের মালিকানাসহ বিভিন্ন ব্যবসায় অন্তত ৫০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে তার। সব মিলিয়ে দেশ-বিদেশে জসিম উদ্দিনের হাজার কোটি টাকার বেশি সম্পদ গড়ে তুলেছেন।

এদিকে শেখ হাসিনার সরকার পতন আন্দোলনে অংশ নেওয়া অনেকে অন্ধ হয়েছেন সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের ক্যাশিয়ার এই জসিম উদ্দিন আহমেদের ছোড়া গুলিতে। বুধবার রাজধানীর নিকুঞ্জে হোটেল লো-মেরিডিয়ানের পাশে রাস্তা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে খিলক্ষেত থানা পুলিশ। ওইদিন তাকে আদালতে হাজির করা হয়। এর পর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাড্ডা থানার এসআই রাসেল পারভেজ তাকে আটক রাখার আবেদন করেন।

গতকাল ঢাকার মহানগর হাকিম বেলাল হোসেনের আদালত শুনানি শেষে জসিমকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পুলিশ বলছে, জসিম বাড্ডা থানায় দুর্জয় আহম্মেদ নামে এক ব্যক্তিকে হত্যাচেষ্টার মামলার আসামি।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ২০ জুলাই দুর্জয় আহম্মেদ (২৮) কোটা আন্দোলনের মিছিলে অংশগ্রহণ করে মধ্যবাড্ডা ইউলুপের নিচে পোস্ট অফিস গলির মাথায় রাস্তার ওপর অবস্থান নেয়। জসিম আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নির্দেশনায় অবৈধ অস্ত্র দিয়ে আন্দোলনকারীদের হত্যার উদ্দেশে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। এতে দুর্জয়ের দুই চোখ অন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া মাথায় পেছনে আঘাত লেগে গুরুতর আঘাত প্রাপ্ত হন। ওই সময়ে জসিম ও আওয়ামী লীগের অন্যরা দুর্জয়কে মৃত ভেবে রাস্তায় ফেলে চলে যান। পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে পাশের এএমজেড হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। পরে দুর্জয় উন্নত চিকিৎসার জন্য সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।